Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে কৃষকদের করণীয়

রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে কৃষকদের করণীয়
ড. মুহ: রেজাউল ইসলাম
আলু বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি অন্যতম জনপ্রিয় সবজি এবং রপ্তানিযোগ্য একটি অর্থকরী ফসল। গত বছর প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মে: টন এদেশে আলু উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ প্রতি বছর যে পরিমাণ  আলু  উৎপাদন হয় তা হিমাগারে সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতা থেকে অনেক বেশি। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে আলুর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, ফলে প্রতি বছরই আলুর মৌসুম শুরুর আগে শুধু কৃষকরাই নয়, অনেক নতুন  নতুন তরুণ উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষের দিকে ঝুঁঁকে পড়ছেন। কারণ আলু চাষে স্বল্প সময়ে লাভ অনেক  বেশি।
রপ্তানিযোগ্য আলু চাষ শুরু করার পূর্বেই  যদি কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়, তাহলে আলুর কাক্সিক্ষত ফলন পাওয়া সম্ভব এবং কৃষক ভাইয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে প্রয়োজনীয় বিবেচ্য বিষয়সমূহ হলো-জমি নির্বাচন, বিশ^স্ত উৎস হতে আলুবীজ সংগ্রহ, মাটি শোধন, বীজ শোধন, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, আলু উত্তোলন করা যা নি¤েœ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো-
জমি ও জাত নির্বাচন : বেলে বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে আলু ভালো হয়। সূর্যের আলো প্রচুর পড়ে এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি আলু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। জমিতে পানি সেচ দেয়া ও পানি নিষ্কাশনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকাও দরকার। এ জন্য জমি সমতল করতে হয়। যেহেতু আলু মাটির নিচের ফসল, তাই জমি গভীর চাষ দিতে হয়। জমি চাষ দেয়ার পর ৭ থেকে ১৫ দিন রোদে ফেলে শুকিয়ে নিতে হয়। এতে মাটির নিচে থাকা বিভিন্ন পোকা, পোকার কীড়া ও পুত্তলি এবং রোগজীবাণু রোদের তাপে নষ্ট হয়। আড়াআড়ি  কয়েকটি চাষ দিয়ে মাটি এমনভাবে ঝুরঝুরে করতে হয় যেন মাটির মধ্যে বাতাস সহজে  চলাচল করতে পারে, এতে আলুর টিউবার গঠনের কাজটি সহজ হয়। চূড়ান্তভাবে জমি তৈরির আগেই সব আগাছা ও  আগের ফসলের  অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে দূরে কোথাও পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তিন বছর পর পর শতকপ্রতি ৪ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করলে আরও ফলন পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য আলুর জাতগুলো হচ্ছে-সানসাইন, প্রাডা, সান্তানা, কুইন এ্যানি, কুম্বিকা, ডোনাটা, ডায়মান্ট, গ্রানোলা, বারি আলু-৬২, মিউজিকা, বারি আলু-৯০ ইত্যাদি নির্বাচন করা যেতে পারে।
মাটি শোধন : জমি তৈরির আগে মাটি শোধন করে নিতে পারলে ভালো হয়। এতে আলুর ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ করা যায়।  শেষ চাষের আগে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ কেজি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে চাষ দিয়ে সেচ দিতে হয়। ব্লিচিং পাউডার জমির মাটির সাথে মেশানোর পর জমিতে অবশ্যই জো অবস্থা থাকতে হয়। এভাবে ২৮ থেকে ৩০ দিন জমি ফেলে রাখতে হয়। এতে জমির মাটি শোধন হয় অর্থাৎ মাটির বিশেষ বিশেষ রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়।
আলু বীজ সংগ্রহ : বিশ্বস্ত কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আলুবীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ আলু যদি খারাপ হয় তাহলে আলু চাষের সব আয়োজনই বিফলে যেতে পারে। তাই এমন উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হয় যেন আলুর বীজ খারাপ হলে তার জন্য জবাবদিহিতা থাকে।
বীজ শোধন : বীজ সংগ্রহের পর বীজ শোধন করতে হয়।  কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক বীজ আলু শোধনে ব্যবহার করলে ১ গ্রাম ছত্রাকনাশক ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১ কেজি কাটা বীজ আলু ৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে বীজবাহিত ছত্রাকঘটিত রোগজীবাণু ধ্বংস হয়। আলুর ঢলে পড়া ও গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে স্ট্রেপটোমাইসিন মিশ্রিত করতে হয়। বীজ আলু সংগ্রহের পর কাটার আগে আলো-বাতাস চলাচল করে এমন পরিষ্কার সমতল জায়গায় বস্তা খুলে আলু বের করে এক থেকে দেড় ফুট উঁচু স্তূপ বা হিপ করে ছড়িয়ে রাখতে হয়। মাঝে মধ্যে ওলট-পালট করতে হয়।
বীজ বপন/রোপণ : বীজআলু লম্বালম্বি দুই ভাগ করে সমভাবে কাটতে হয়, যাতে কর্তিত দু’অংশে কমপক্ষে দুটি করে চোখ থাকে। এই অংশের ওজন ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম এবং ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হতে হয়। অনেকেই চোখের সাথে আলুর অংশ কম রেখে বাকিটুকু খাবার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, এটা ঠিক নয়। কর্তিত অংশের সাথে যতটুকুই থাকুক সবটুকুই রাখতে হয়। বীজ কাটার সময় চাকু বা বঁটির দুই পাশ জীবাণুনাশকে ভেজানো কাপড়ের টুকরো দিয়ে মাঝে মধ্যে মুছে নিতে হয় যেন রোগজীবাণু এক আলু থেকে অন্য আলুতে ছড়াতে না পারে। আলুর কাটা অংশ উপরের দিকে করে মাটিতে ছড়িয়ে বিছিয়ে রাখতে হয়। কখনোই গাদাগাদি করে রাখা উচিত নয়। রাখার স্থানে আলো এবং বাতাস চলাচল ব্যবস্থা থাকতে হয়। এভাবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা রেখে দিলে কাটা অংশের ওপরে একটি শক্ত কালচে ধরনের স্তর পড়ে, যাকে সোবারাইজেশন বলে। এই অংশ ভেদ করে কোনো রোগজীবাণু ঢুকতে পারে না। কাটা অংশে ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে, তাতে অতিরিক্ত হিসেবে পটাশিয়াম সরবরাহ করা হয়। আবার পোকার বিকর্ষক হিসেবেও এটি কাজ করে।
আলু রোপণের সময় : আলু রোপণের উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ পর্যন্ত। দিন পেছালে শীতে গাছের বৃদ্ধি কমে, গাছ খুব বেশি বড় হওয়ার আগেই টিউবার গঠন কাজ শুরু হয়ে যায়। এতে টিউবার সংখ্যা কমে যায়। শীতে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের টিউবার গঠন ভালো হয়। ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আলুবীজ রোপণ করা যায়, তবে ফলনও আনুপাতিক হারে কমে যায়।
সার ব্যবস্থাপনা
জৈব সার : আলু চাষে কম্পোস্ট সার ব্যবহার না করা ভালো। কারণ যেসব কম্পোস্টের উপাদান হিসেবে শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ বা গাছ-গাছড়ার বা যেকোনো জৈব জিনিসের পচনশীল অংশ ব্যবহার করা হয় সেসবের সাথে ঢলে পড়া রোগের রোগজীবাণু থাকতে পারে, যা এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য কম্পোস্টের পরিবর্তে ভালোভাবে পচানো শুকনো গোবর সারই জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা ভালো। সবচেয়ে ভালো হয় বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে সংগ্রহ করা শুকনো সার।
রাসায়নিক সার :  আলু চাষে একর প্রতি ইউরিয়া ১১২ কেজি, টিএসপি ৭৫ কেজি, এমওপি ১১২ কেজি, জিপসাম ৪০ কেজি, জিংক সালফেট ৫ কেজি এবং বোরণ সার ৪ কেজি ব্যবহার করতে হয়। অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক এমওপি ও সম্পূর্ণ টিএসপি এক সাথে মিশিয়ে বীজ আলু বপনের পাশে সারের নালায় দিতে হয়। বাকি সার রোপণের ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। আর জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বোরণ সার শেষ চাষের সময় ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। যেসব অঞ্চলের মাটিতে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি আছে সেসব অঞ্চলে ম্যাগনেশিয়াম সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হয়।
উপরি সার প্রয়োগ : উপরি সার প্রয়োগের পর আলুর সারিতে বা গাছের গোড়ায় উঁচু করে (প্রায় ২০ সেন্টিমিটার) মাটি তুলে দিতে হয়। ভেলির গোড়া চওড়া রাখার জন্য ১৫ সেন্টিমিটার প্রস্থের ছোট কোদাল ব্যবহার করতে হয়। মাটি তোলার সময় লক্ষ রাখতে হয় যেন কোদালের সাথে প্রয়োগকৃত সার উঠে না আসে।
সেচ :  আলু চাষে সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোপণের সময় জমির জো অবস্থা থাকতে হয় এবং রোপণের পর ১ থেকে ২টি গাছ যখন মাটির ওপরে উঠে আসে তখন প্রথমবার সার উপরিপ্রয়োগের পর একটি হালকা সেচ দিতে হয়। এটি সাধারণত রোপণের ৭ দিনের মধ্যে দিতে হয়। এবপর মাটির প্রকার ও প্রয়োজন অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হয়। তবে টিউবার গঠনের শুরুর সময় অর্থাৎ ৪০ থেকে ৪৫ দিনের সময় মাটিতে রস না থাকলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বা ফলন কমে যেতে পারে। সুষম সেচের জন্য তাই নিয়মিত জমি পরিদর্শন করতে হয়।
এছাড়াও নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আবহাওয়া গরম, ঠা-া, কুয়াশা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আবহাওয়া বিষয়ে আগাম সতর্কতা বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। আবহাওয়া প্রতিকূলে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ছত্রাক নাশক (ম্যানকোজেব ও মেটালেক্সিল+ ম্যানকোজেব) অনুমোদিত মাত্রায় বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে  প্রতিরোধ করতে হবে যা  আক্রান্ত হওয়ার পর তা বেশ দুরূহ বিশেষ করে বিলম্বিত ধসা বা মড়ক রোগ। আলু রপ্তানির ক্ষেত্রে অবশ্যই চাষাবাদ সংক্রান্ত তথ্যাদি রেজিস্টারে লিপি করে রাখতে হবে। এতে করে আলু রপ্তানিযোগ্য কোম্পানির কাছে ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব। কৃষক কিংবা উদ্যোক্তাসহ সবাই অনেক বেশি লাভবান হতে পারবেন। রপ্তানিযোগ্য আলু ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করা যায়। আর বীজ  আলু ৭২ থেকে ৭৫ দিন এবং খাবার আলু ৮০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে তুলতে হয়। জাতভেদে বাংলাদেশে আলুর ফলন একরপ্রতি ৭ থেকে ১০ টন পর্যন্ত হতে পারে ।

লেখক : জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার, ডিএই, গাইবান্ধা। ই-মেইল-rezaul0171669@gmail.com,  মোবাইল-০১৭১৬৬৯৭১৯৬

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon